ঢাকা,বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪

রোডম‌্যাপ আ.লীগকে ক্ষমতায় আনার নকশা : বিএনপি

Fakrul-7-20170718173522 অনলাইন ডেস্ক ।।

একাদশতম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত রোডম‌্যাপকে ‘নীলনকশা’ হিসেবে দেখছে বিএনপি।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে ফের ক্ষমতায় আনার উদ্দেশ্যে রোডম‌্যাপের ছক আঁকা হয়েছে বলেও দাবি দলটির।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব‌্য করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

গত রোববার আগারগাঁওয়ে ইটিআই ভবনে এক সংবাদ সম্মেলন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা একাদশ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। দশম সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি।

সেক্ষেত্রে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির আগে ৯০ দিনের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। এই রোডম্যাপ জাতির আশা আকাঙ্খাকে উপেক্ষা করেছে। পুরোনো কায়দায় আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় যাওয়ার নীলনকশা বাস্তবায়নের যাত্রা শুরু করেছে।’

রোডম্যাপে জাতি চরমভাবে হতাশ ও ক্ষুদ্ধ হয়েছে বলেও দাবি করেন বিএনপির এই নেতা।

‘জাতির প্রত্যাশা ছিল, নির্বাচন কমিশন সকল ভয়ভীতি প্রভাব মুক্ত হয়ে, সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচনকালীন একটি সহায়ক সরকারের দাবি বাস্তবায়নে কার্যকরি প্রদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সেই লক্ষ্যেই সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করবে। কিন্তু ইসি জাতির সেই আশাকে সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট করেছে।’

নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যেন-তেনভাবে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান ও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানো নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নয়। আগামী নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনে আনতে হবে, সকলকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ দিতে হবে।’

নির্বাচন কমিশন লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য রোডম্যাপ দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব বলে তারা (ইসি) জনগণকে আরো হতাশ করেছে। তারই বক্তব্য সরকারের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী এবং নেতাদের বক্তব্যেরই প্রতিফলন। অথচ বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন।’

বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমান সরকার কোনো নির্বাচিত সরকার নয়। তথাকথিত গঠিত সংসদে কোনো বিরোধীদল নেই। তাদের নৈতিক ভিত্তি নেই তাই ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে আরেকটি নির্বাচন করতে চায়।’

বর্তমান নির্বাচন কমিশন আরেকটি ‘রকিবমার্কা’ কমিশনে পরিণত হতে চলেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশন যে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারবে না তা স্পষ্ট হয়ে গেছে।’

ইসির সংলাপে বিএনপি সাড়া দেবে কী না- এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সংলাপে সাড়া দেওয়া অনেক পরের কথা। বিএনপির প্রত্যাশা, নির্বাচন কমিশন বাস্তবতা উপলব্ধি করে সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা নেবে।’

এ সময় নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের জন্য সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একটা জায়গায় পৌঁছানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির এই মুখপাত্র।

সংবিধানের বাইরে গিয়ে নির্বাচন সম্ভব নয় ক্ষমতাসীনদের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘রাজনৈতিক ইস্যু, এটাকে রাজনৈতিকভাবেই সমাধান করতে হয়। এখানে সংবিধানের কথা বলে লাভ নেই। জনগণের জন্য সংবিধান, সংবিধানের জন্য জনগণ নয়। সংবিধান জনস্বার্থের ঊর্ধ্বে হতে পারে না।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেছেন। নির্বাচনকালীন সরকার যদি দলীয় সরকার থাকে তাহলে ইসি নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের ব্যবস্থা না করে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে আমরা মনে করি, এতেই ষড়যন্ত্র আছে।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ।

পাঠকের মতামত: